রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি: পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্থ দুইশত পরিবারের পাশে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লালুয়া ইউপির চান্দুপাড়া গ্রামের ২০০ পরিবারের মধ্যে এ খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে খাদ্য সহায়তার প্রদান করা হয়েছে।
এ সময় প্রত্যেক পরিবারকে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই কেজি আলু, এক লিটার ভোজ্য তেল, পাঁচটি খাবার স্যালাইন ও একটি মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ বাংলা ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (ডিবিডিএফ) চেয়ারপার্সন ও শিক্ষাবিদ ড. শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস, লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শওকত হোসেন বিশ্বাস, সমাজসেবক ও সাবেক ইউপি সদস্য তারিক খান, প্রথম আলো কলাপাড়া বন্ধুসভার সভাপতি জাহানারা খান প্রমুখ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন কলাপাড়া বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাধারণ সম্পাদক কাজী তরিকুল ইসলাম সুনান, উপ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফসানা পলি, মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক মরিয়ম আক্তার, পাঠচক্র সম্পাদক প্রমিতা কর মুমু, সমাজকল্যান সম্পাদক জাকিয়া সুলতানা, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান স্বাধীন, সদস্য সিফাত আহসান, উপদেষ্টা মোস্তফা জামান সুজন এবং প্রথম আলোর কলাপাড়া প্রতিনিধি নেছারউদ্দিন আহমেদ টিপু। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়ে চান্দুপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এতে হাজারো গ্রামবাসীর ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে। অনেকের ঘের, পুকুরের মাছ জোয়ারের পানির সাথে বের হয়ে গেছে। এতেও ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নটি সাগর মোহনার রাবনাবাদ চ্যানেলের পাড়ে অবস্থিত। ইউনিয়নের চাড়িপাড়া থেকে বুড়োজালিয়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কি. মি. বাঁধ আগে থেকেই বিধ্বস্ত হয়ে রয়েছে। যার কারণে স্বাভাবিক জোয়ারেও প্লাবিত হয়ে যায় ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম। আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে মুহুর্তেই প্লাবিত হয়ে পড়ে পুরো ইউনিয়ন। এবারেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া, বুড়োজালিয়া, মুন্সিপাড়া, মঞ্জুপাড়া, নাওয়াপাড়া, চাড়িপাড়া, বানাতিপাড়া, পশুরবুনিয়া, হাসনাপাড়া, ছোট পাঁচ নং, বড় পাঁচ নং গ্রামসহ অন্তত ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কাজকর্ম না থাকায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর থেকে কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে মানুষজনকে।
অনেকের পরিবারে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামের মানুষজনের বাড়ি-ঘর, গ্রামীণ মেঠোপথ, চাষযোগ্য কৃষি জমি এখনও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষজনের দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া গ্রামের অসহায় ও দূর্গতদের সহায়তা করতে পাশে গিয়ে দাঁড়ান। তারা ওই গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ২০০ পরিবারকে একদিন আগে চিহ্নিত করেন। লালুয়া ইউনিয়নের চান্দুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কুলসুম বেগম(৪৩) বলেন, ঘর-দুয়ার জোয়ারের পানিতে ভাঙছে। মোগো থাহা খাওয়ায় সমস্যা হয়। জোয়ারের সময় রাস্তায় থাকতে হয়। এহন আল্লাহই একমাত্র ভরসা।
লালুয়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা বাজার প্রাঙ্গণে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে চান্দুপাড়া গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, দিন মজুরি কইরা ভালোই চলতেছিল সংসার। রাস্তাঘাট ভাঙনে আয়ের পথটাও বন্ধ হইয়া গেছে। জীবনে এই প্রথম ত্রাণের লাইগ্যা লাইনে দাঁড়াইলাম। লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে লালুয়া ইউপির ১০ টি গ্রামে এখনও জোয়ারের পানি উঠে। এইসব গ্রামের মানুষের ত্রাণের চেয়েও জরুরী স্থায়ী বাঁধ। বাঁধ না থাকায় এখনও ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম লবন পানি ওঠায় এবার মানুষজন তাঁদের জমিজমা চাষ করতেও পারবেনা।